
চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার থেকে শুরু, তারপর পুরো বাংলাদেশ— এমনকি উপমহাদেশের সংগীতপ্রেমীদের হৃদয় জয় করা এক নাম আইয়ুব বাচ্চু। গিটার হাতে মঞ্চে উঠলেই যেন তিনি হয়ে উঠতেন সুরের যাদুকর। আজ ১৮ অক্টোবর, দেশের সংগীত অঙ্গনের প্রবাদপুরুষ আইয়ুব বাচ্চুর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি নেই, কিন্তু তার গানের সুর ও আবেগ আজও কোটি শ্রোতার হৃদয়ে অনুরণিত।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। কৈশোরেই সংগীত ও গিটারের প্রতি গভীর টান অনুভব করেন। ছোট ছোট অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে বড় মঞ্চে নিজের অবস্থান তৈরি করেন প্রতিভা ও পরিশ্রমে।
১৯৮২ সালে জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস-এ যোগ দিয়ে পেশাদার সংগীতজীবন শুরু করেন। পরে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব ব্যান্ড এলআরবি —যা দ্রুতই দেশীয় ব্যান্ড সংগীতের নতুন ইতিহাস গড়ে।
অমর কিছু সৃষ্টি
‘এই রুপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাবো’, ‘ফেরারি মনটা আমার’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালী গিটার’— এসব গান শুধু সুর নয়, সময়ের সীমা পেরিয়ে আবেগের প্রতীক হয়ে উঠেছে। একক অ্যালবাম, ব্যান্ড অ্যালবাম কিংবা মিশ্র সংকলন—যেখানেই থাকুক, তার কণ্ঠ ও গিটার যেন এক অন্য জগতের গল্প বলে।
আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন সত্যিকারের পারফর্মার। স্টেজে উঠলেই দর্শকরা শুধু তার গান শুনতেন না, তার সঙ্গে গাইতেন, অনুভব করতেন। গিটার বাজানোর ভঙ্গি, চোখের ভাষা, দর্শকের সঙ্গে সেই অনবদ্য সংযোগ—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের সংগীতমঞ্চের অনন্য এক কিংবদন্তি।
প্রেরণার নাম আইয়ুব বাচ্চু
আইয়ুব বাচ্চু শুধু একজন গায়ক বা গিটারিস্ট নন—তিনি ছিলেন এক প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। রেখে গেছেন স্ত্রী ফেরদৌস চৌধুরী, কন্যা রাজকন্যা এবং পুত্র তাজওয়ার। নতুন প্রজন্মের অনেক সংগীতশিল্পী তার সুর, দর্শন ও মনোভাব থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন আজও।
আজ ৭ বছর পরেও চট্টগ্রামের এই গৌরবকে ভুলে থাকা অসম্ভব। গিটার হাতে তিনি আর মঞ্চে উঠেন না, কিন্তু তার গান, তার সুর, তার ভালোবাসা—এখনও প্রতিটি সংগীতপ্রেমীর হৃদয়ে বেঁচে আছে অমলিনভাবে।
“এই রুপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাবো,
কিন্তু আমার গান রবে অনন্তকাল।”