
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক নেতৃত্বগুণে গুণান্বিত করার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ যাত্রা শুরু করে ১৯২২ সালে। এরপর থেকে নিয়মিত নেতৃত্বের রদবদল হলেও দেশের নানা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং বহুমুখী চাপে ১৯৯০ সালের পর দীর্ঘ বিরতিতে ২০১৯ সালে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করছেন বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থী। তাদের নিয়েই আমাদের এর আজকের বিশেষ প্রতিবেদন।
কথায় আছে—“যে রাধে সে চুলও বাঁধে।” যুগে যুগে এই প্রবাদকে সত্য প্রমাণে নিজেদের অভ্যস্ত করে নিয়েছে নারীরা। প্রগতিশীল বিশ্বের প্রতিটি খাতে নারী অংশগ্রহণ ও অবদান যেমন উল্লেখযোগ্য, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠেছে ঐতিহাসিক নথি।
তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ডাকসু নির্বাচনে ব্যাপক নারী প্রার্থিতা সাড়া ফেলেছে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের অবাধ ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণে। এবারে ডাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট নারী প্রার্থী ১২৫ জন। এর মধ্যে ডাকসুতে ৬০ জন এবং হল সংসদে ৬৫ জন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এবারের ডাকসু ও হল সংসদে চট্টগ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করছেন বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীও।
চট্টগ্রামের নারী শিক্ষার্থী প্রার্থী হয়েছেন মোট ১২ জন। এর মধ্যে ভিপি পদে হাইভোল্টেজ প্রার্থী উমামা ফাতেমা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদপ্রার্থী ফাতিমা তাসনিম জুমা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে মোট নারী প্রার্থী ৬০ জন। এদের মধ্যে ২৮টি পদের বিভিন্ন পদে চট্টগ্রামের মেয়ে প্রার্থী রয়েছেন ৭ জন।
ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন তিনি। অতীতে ছাত্র ফেডারেশনের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
তুখোড় আলোচনায় রয়েছেন কক্সবাজারের মহেশখালীতে জন্মগ্রহণ করা ফাতিমা তাসনিম জুমা। এবারের ডাকসুতে তিনি শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজনৈতিক মতাদর্শের বিচারে তিনি দীর্ঘদিন ইনকিলাব মঞ্চের সক্রিয় সদস্য।
তাছাড়া কমনরুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে লড়ছেন সাতকানিয়ার উম্মে সালমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সুর্মী চাকমা। ক্যারিয়ার উন্নয়নমূলক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাঙামাটির রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। এছাড়া বাম সমর্থিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল থেকে কার্যকরী সদস্য পদে লড়ছেন সীতাকুণ্ডের ইশরাত জাহান ইমু এবং হেমা চাকমা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের পাঁচটি হলে এবারের নির্বাচনে মোট নারী প্রার্থী হয়েছেন ১৬৫ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে জন্ম নেওয়া প্রার্থী সংখ্যা ৫ জন।
কবি সুফিয়া কামাল হলে সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মিরসরাইয়ের তাসনিয়া জান্নাত চৌধুরী। তিনি ছাত্রদলের হল সংসদ প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। একই হলে কার্যকরী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতকানিয়ার মাহরিনা জান্নাত।
ভোটার তালিকা অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ জন (৪৭.৬ শতাংশ) এবং পুরুষ ভোটার ২০ হাজার ৯১৫ জন (৫২.৪ শতাংশ)। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৬০ জন (১৩ শতাংশ) এবং পুরুষ প্রার্থী ৪১১ জন (৮৭ শতাংশ)। সে হিসেবে নারী ভোটারের অনুপাতে প্রার্থীসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
এমকেআর/দেশবিদেশ