
চট্টগ্রাম বন্দরে যানবাহনের প্রবেশ ফি চারগুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন প্রাইম মুভার মালিক ও শ্রমিকরা। শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে তারা এই কর্মসূচি শুরু করেন।
এর ফলে বন্দরে কোনো আমদানি পণ্য বের হচ্ছে না, একইসঙ্গে রপ্তানি পণ্যও বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে করে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কার্যত অচল হয়ে পড়েছে এবং এর প্রভাব সরাসরি ভোক্তা বাজারে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার যানবাহন (প্রাইম মুভার, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান) চলাচল করে। নতুন ট্যারিফ অনুযায়ী বন্দরের ৫৬টি সেবার ফি গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) ১৫ অক্টোবর থেকে এই নতুন শুল্ক কাঠামো কার্যকর করেছে, যার আওতায় যানবাহনের প্রবেশ ফি ৫৭.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই অতিরিক্ত খরচ কে বহন করবে—আমদানিকারক, ডিপো মালিক নাকি পরিবহন মালিক, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় মালিক-শ্রমিকরা বন্দরে প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন,“অতিরিক্ত ফি কে দেবে তা নির্ধারণ হয়নি। তাই আপাতত মালিক ও শ্রমিকরা মিলে পরিবহন বন্ধ রেখেছেন।”
চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ও ট্রেলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের জানান,“স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ফি বাড়ানো হয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছি।”
চট্টগ্রাম ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ বলেন,“শুধু প্রাইম মুভার নয়, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানও বন্দরে প্রবেশ বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। বন্দরে পণ্য পরিবহন কার্যত শতভাগ বন্ধ।”
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন,“পরিবহন বন্ধ থাকায় আমদানি পণ্য খালাস নেওয়া যাচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বাড়ছে, যা সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তার ওপরও প্রভাব ফেলবে।”
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইসিডিএ) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান,“প্রাইম মুভার বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর ও ১৯টি বেসরকারি ডিপোর মধ্যে কনটেইনার পরিবহন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এতে রপ্তানি কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।”
ব্যবসায়ী এস এম আবু তৈয়ব বলেন,“আগাম আলোচনা ছাড়া ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রমে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।”
এমকেআর/দেশবিদেশ