• শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন

চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগান; অর্থনীতি ও পর্যটনে সমৃদ্ধির অনন্য সম্ভাবনা

মো. রায়হান, চট্টগ্রাম / ১২৭
শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫
chandpur belgaon tea garden

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত চাঁদপুর-বেলগাঁও চা-বাগান। সবুজে ঘেরা পাহাড়ি এ চা-বাগান প্রায় ৩ হাজার ৪৭২.৫৩ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। মানসম্মত চা উৎপাদনে বর্তমানে এটি দেশের শীর্ষ পাঁচ চা-বাগানের মধ্যে অন্যতম। পাতার উৎকৃষ্ট মান, গুণগত বৈশিষ্ট্য, পুষ্টিগুণ এবং বাজারে ভালো দামের জন্য এ বাগানটি বিশেষ সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে এটি সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন।

চা উৎপাদনের পাশাপাশি চাঁদপুর-বেলগাঁও বাগান পর্যটকদের কাছেও সমান জনপ্রিয়। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত ভ্রমণপিপাসু এখানে ভিড় জমায়। উঁচু-নিচু পাহাড় জুড়ে সারি সারি চা-গাছ আর নীরব-স্নিগ্ধ প্রকৃতি দর্শনার্থীদের এনে দেয় এক ভিন্ন রকম শান্তির অভিজ্ঞতা। ফলে এটি এখন কেবল অর্থনীতির জন্য নয়, বরং একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবেও পরিচিত।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯১২ সালে ব্রিটিশ আমলে ভারতের কুণ্ডু কোম্পানি এ বাগান প্রতিষ্ঠা করে। পরে এটি লট চাঁদপুর ও লট হল নামে দুটি অংশে বিভক্ত হয়। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর মালিকানা নিয়ে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে বাগানের অধিকাংশ জমি স্থানীয়দের অবৈধ দখলে চলে যায়। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার পর ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) তত্ত্বাবধানে মাত্র ৮ একর জমিতে আবার চা চাষ শুরু হয়।

পরে ১৯৯২ সালের ৫ মে বাংলাদেশ চা-বোর্ডের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ব্র্যাক কোম্পানির কাছে এর ব্যবস্থাপনা হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে সিটি গ্রুপ এ বাগানের মালিকানা গ্রহণ করে সফলভাবে পরিচালনা করছে।

কর্মসংস্থান ও উৎপাদন

চাঁদপুর-বেলগাঁও চা-বাগানে বর্তমানে প্রায় ৮০০-র বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করছেন। শ্রমিকরা এখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানান।

২০০২ সালে বাগানটির উৎপাদন ছিল মাত্র ৮০ হাজার কেজি চা। ধারাবাহিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনার ফলে চলতি বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ কেজি।

অর্থনীতি ও পর্যটনের সমন্বয়

চাঁদপুর-বেলগাঁও চা-বাগান দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি পর্যটন খাতকেও সমৃদ্ধ করছে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা এই সবুজ চা-বাগান কর্মসংস্থান, চা উৎপাদন এবং ভ্রমণ তিন ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সবুজে মোড়া এ বাগান তাই শুধু বাঁশখালীর গর্বই নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পর্যটনের সম্ভাবনারও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এআরই/দেশবিদেশ


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ