• শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৮ অপরাহ্ন

এভারকেয়ার হাসপাতাল এখন আবেগের কেন্দ্রবিন্দু

দেশবিদেশ প্রতিবেদক / ৫
বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
1764778015 0efc294e4f8e7503dd493587fa8b4490

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে গত কয়েকদিন ধরে ভিড় বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ২৩ নভেম্বর থেকে সেখানে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। দলীয় সূত্র ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা এখন সংকটাপন্ন।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুসজনিত জটিলতায় ভুগছেন। তার চিকিৎসায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে। চীন ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি লন্ডনে থাকা বড় ছেলে তারেক রহমান সার্বক্ষণিক চিকিৎসা আপডেট নিচ্ছেন। পুত্রবধূ চিকিৎসক জোবাইদা রহমানও চিকিৎসা সমন্বয়ে যুক্ত আছেন।

হাসপাতালের বাইরে নিঃশব্দ অপেক্ষা

২৮ নভেম্বর বিকেলে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার পর থেকেই হাসপাতালের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। সেখানে কোনো রাজনৈতিক শ্লোগান নেই, নেই কোনো ব্যানার। শুধু উদ্বেগ, দোয়া ও অপেক্ষা—এমন দৃশ্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুব বেশি দেখা যায়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর বাড্ডা থেকে আসা রিকশাচালক মফিজুল ইসলাম বলেন, “রাজনীতি বুঝি না। শুধু দোয়া করতে এসেছি।” গুলশানের গৃহিণী সালমা বেগম জানান, টিভিতে খবর দেখেই তিনি সন্তানদের নিয়ে দোয়া করতে এসেছেন।

রিকশাচালক, কর্পোরেট কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাদরাসাছাত্র এমনকি বিদেশফেরত প্রবাসী—সবার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

নজিরবিহীন প্রটোকল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে ‘রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তার নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার বাইরে কাউকে এর আগে এই ধরনের আনুষ্ঠানিক প্রটোকল দেওয়ার নজির প্রায় নেই।

সরকারি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। বিদেশে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। সৌদি আরব, কাতারসহ কয়েকটি দেশ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানা গেছে।

রাজনীতির দীর্ঘ যাত্রা

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। স্বৈরশাসনবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন।

১৯৯১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগ নেন। তার আমলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি প্রথা চালু হয়, যা নারীশিক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে বলে শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। একই সময়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু করা হয়, যা পরবর্তীতে দেশের রাজস্ব কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হয়ে ওঠে।

পরিবেশ ও নগর ব্যবস্থাপনায় পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ, দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিনচালিত যানবাহন বন্ধ করে সিএনজি চালু এবং সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি তার আমলের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

রায়হান/দেশবিদেশ


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ