• শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৩ অপরাহ্ন

কোটি ডলার ক্ষতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের সালিশি কেন্দ্রে এস আলম গ্রুপের আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩৬
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
1761726072 e46bcef415aa3af1fb9107694a45d8df 1

কোটি কোটি ডলার ক্ষতির অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক সালিশি আবেদন করেছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম)।

সোমবার (২৯ অক্টোবর) এস আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্রে (ICSID) আবেদন দাখিল করেন।

‘সম্পদ বাজেয়াপ্তের টার্গেট বানানো হয়েছে’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগে এস আলম গ্রুপ দাবি করেছে— মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ‘যথেচ্ছভাবে সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্তের টার্গেটে’ পরিণত করেছে, যার ফলে তারা বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

প্রতিবেদনটি আরও উল্লেখ করে, এই মামলা শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া কোটি কোটি ডলার উদ্ধার অভিযানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার ওপর একটি সম্ভাব্য ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, বাংলাদেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাংকিং সেক্টরে অর্থপাচারের অভিযোগ ও পাল্টা দাবি

সরকারের পক্ষ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর। তিনি অভিযোগ করেন, এস আলম পরিবার দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছে। তবে এস আলম এসব অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন।

এর আগে গত ডিসেম্বরে এস আলমের আইনজীবীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সম্পদ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে ছয় মাসের সময়সীমা দিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাধান না হলে আন্তর্জাতিক সালিশিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল।

সালিশি আবেদনে কী আছে?

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, মার্কিন আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল অ্যান্ড সুলিভান–এর আইনজীবীরা সালিশি আবেদন জমা দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এস আলম পরিবারের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করেছে, তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মিথ্যা তদন্ত চালাচ্ছে এবং পরিবারটিকে লক্ষ্য করে উসকানিমূলক গণমাধ্যম প্রচারণা পরিচালনা করছে।

এসব কারণে পরিবারটি “কয়েকশ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ক্ষতির শিকার হয়েছে” বলে দাবি করা হয়েছে, যদিও নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর এ বিষয়ে বলেন, “বিষয়টি যখন আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পৌঁছাবে, আমরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় এর জবাব দেব।” তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দপ্তর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব ও সালিশের আইনি ভিত্তি

সালিশি দাবিটি বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে ২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় করা হয়েছে। এস আলম ও তার পরিবার ২০১১ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন এবং ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটির নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। তারা ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন।

এর আগে এস আলম পরিবার দাবি করেছিল, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে তারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা আইন ১৯৮০-এর অধীনে প্রদত্ত অধিকারের আওতাভুক্ত।

আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর এর আগে এস আলম পরিবারের বিরুদ্ধে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জোরপূর্বক ব্যাংক দখল ও অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছিলেন। তবে সালিশি দাবিতে এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব অভিযোগের কোনো প্রমাণ সরকার উপস্থাপন করতে পারেনি।

এআরই/দেশবিদেশ


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ