
চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দাদের কাছে যানজট যেন নিত্যদিনের সহচর। অফিসগামী থেকে শুরু করে শ্রমজীবী—সবাই প্রতিদিন আটকে যান অসহনীয় জটের ফাঁদে। অথচ শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হচ্ছে বারবার। সড়কে শৃঙ্খলার বদলে চলছে অঘোষিত ‘টোলের রাজনীতি’, যেখানে আইন প্রয়োগের চেয়ে টাকার ঝনঝনানিই হয়ে উঠছে মূল নিয়ম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বহদ্দারহাট-কালুরঘাট সড়কে সবুজ রঙের তিনচাকার ম্যাক্সিমা বহু সাধারণ যাত্রীর নির্ভরযোগ্য বাহন হয়ে উঠেছে। নয়জন যাত্রী বহনক্ষম এই ক্ষুদ্র যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাজারো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তবে তাঁদের দৈনিক আয়ের বড় অংশ গুনতে হচ্ছে ‘জরিমানার নামে ফি’, যা অনেক সময় পরিণত হচ্ছে ‘অফ-দ্য-রেকর্ড খরচে’।
রহিম নামে এই রুটের এক চালক বলেন, “আগে ২০ টাকা দিলেই অনেক সময় পার পাওয়া যেত, এখন একবার নজরে পড়লেই সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা। অহনকার স্যারদের রাগ অনেক বেশি।”
তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন —“একই মামলার জরিমানা ঢাকায় যেখানে ২,৫০০ টাকা, সেখানে চট্টগ্রামে কখনো তা দাঁড়ায় ১৫,০০০ টাকায়!
তাহলে একই দেশে কি ভিন্ন ভিন্ন আইন চলে?”
গাড়ির দাম যেখানে দেড় লাখ টাকার মতো, সেখানে বৈধ কাগজপত্র করতে খরচ পড়ছে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
মুরাদপুরের এক চালকের আক্ষেপ— “আমার গাড়ির দাম ১.৫ লাখ, কিন্তু কাগজপত্র করতে খরচ হলো ১৫ লাখ। এখন আমি যেন চালাচ্ছি ১৫ লাখের গাড়ি।”
অন্য আরেক চালক জানান, যারা এসব কাগজপত্র তৈরি করে দেয়, তারা বলে “এখনকার স্যারদের প্রভাব বেশি, তাই খরচও বেশি।”
মামলার নামে হয়রানি আর অযৌক্তিক খরচের টাকা যায় কাদের ভাগে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কমিশনার নেছার উদ্দিন আহমেদ জানান, “আমাদের অফিসাররা শুধু ন্যায্য জরিমানাই নেন। রুট পারমিটের খরচ বিআরটিএ-র বিষয়, এতে ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্টতা নেই।”
এখন প্রশ্ন রয়ে যায়, আইনশৃঙ্খলা ও শৃঙ্খলাবোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো দায় এড়িয়ে গেলে নাগরিকদের মুক্তি কোথায়? ঘুষ, অনিয়ম ও বৈষম্যমূলক জরিমানার চাপে যখন সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র চালকেরা পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তখন শৃঙ্খলার বদলে ‘লেনদেনের শৃঙ্খলাই’ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এআরই/দেশবিদেশ