
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ২০–২১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার (৩১ আগস্ট) সকাল থেকে পুরো ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আহতদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আজকের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলায় অনেকেই আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের পরীক্ষা ছিল, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।”
কীভাবে ঘটল সংঘর্ষ
শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী ২ নম্বর গেট সংলগ্ন ভাড়া বাসায় প্রবেশ করতে গেলে দারোয়ানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান তাকে মারধর করলে ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে গেলে উত্তেজনা বাড়ে এবং স্থানীয়রা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরাও সংঘর্ষে অংশ নেয়।
রাত দেড়টার দিকে ২ নম্বর গেট এলাকায় সংঘর্ষ চরমে ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এসময় অনেক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে আহত করা হয়।
আহতদের নাম
আহতদের মধ্যে রয়েছেন—আরবি বিভাগের ফুয়াদ হাসান, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শাওন, ইতিহাসের তাহসান হাবিব, লোকপ্রশাসনের আশরাফ রাতুল, গণিতের লাবিব, ইংরেজির হাসান জুবায়ের হিমেল, অর্থনীতির নাহিন মুস্তফা, ফারসির আল-মাসনুন, ইসলামিক স্টাডিজের আশিক মিয়া, দর্শনের মাহিন ও তামিম, সমাজতত্ত্বের হুমায়ুন কবির, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের রিদুয়ান, অ্যাকাউন্টিংয়ের রিফাত ও রিপন, বাংলার সাইদুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইয়েন।
চবি মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ টিপু সুলতান জানান, অনেক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতরদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকায় প্রথমে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। পুলিশের উপস্থিতি যথেষ্ট ছিল না।”
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর পুলিশ গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনীকে ডাকা হলে রাত ৩টা ২০ মিনিটে তারা এসে নিয়ন্ত্রণ নেয়। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।