আজকের সর্বশেষ


গর্ভাবস্থায় যে ১০ টি উপসর্গ দুশ্চিন্তার কারণ নয়





শেয়ার

দেশবিদেশ২৪.কম অনলাইন ডেস্ক : গর্ভাবস্থায় ওজন বেড়ে যাওয়া, বমি হওয়া এবং অবসাদগ্রস্ত হওয়া সম্পর্কে সবাই জানেন। এই সময়ে শরীরে হরমোন পরিবর্তনের ফলে আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেগুলোতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ১. সাদা স্রাব নিঃসরণ : লিউকোরিয়ার মতো সাদা স্রাব নিঃসরণ এই সময়ে অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণেই গর্ভাবস্থায় এমনটি হয়ে থাকে। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা কেলী ক্যাস্পার বলেন, এই সময়ে হরমোনের প্রভাবে গ্রন্থি হতে অতিরিক্ত স্রাব নিঃসৃত হয় যা দেখতে অনেকটা  লিউকোরিয়ার স্রাবের মতোই। প্রসবের ২/১ সপ্তাহ আগে এই স্রাবের আধিক্য দেখা যেতে পারে কারণ এই তরল জরায়ূর মুখ খুলতে এবং জরায়ূ মুখকে নরম করে প্রসবের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। স্রাবের বর্ণ সাদা বা হলুদাভ হলেও চিন্তার কিছু নেই। তবে ইস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণে স্রাবের পরে অনেক সময় যোনিদ্বারে চুলকানি হতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে তরল যদি পানির ন্যায় বর্ণহীন হয় এবং ক্রমাগত প্রচুর পরিমানে নিঃসৃত হতে থাকে তবে তা স্রাব নয় বরং জরায়ূর মুখে ছিদ্র হয়ে গর্ভের পানি ভেঙে এমন হতে পারে, সেক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ২. অতি সামান্য রক্তক্ষরণ : ২০ থেকে ৪০ শতাংশ গর্ভবতীর শুরুর দিকে খুব সামান্য পরিমানে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় জরায়ূতে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহের কারণে এটি ঘটে থাকে অথবা ভ্রুণ যখন জরায়ূর ভেতরের স্তরে স্থাপিত হওয়া শুরু করে তখন সামান্য রক্ত ক্ষরণ হতে দেখা যায়। ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে এই ঘটনা ঘটতে পারে। খুব সামান্য পরিমানে  গোলাপি বা কালচে রক্তের ছোপ অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয় কিন্তু যদি বেশি পরিমানে তাজা রক্ত নিঃসৃত হয় যা দেখতে মাসিকের মতো মনে হয় তবে কালক্ষেপন না করে দ্রুত  ডাক্তারের কাছে যেতে হবে । অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। অল্পমাত্রার রক্ত ক্ষরণের পরও সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছে এমন অনেক মা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পোর্টল্যান্ডের নার্স জিনি ফকনার। ৩. নাক ও দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া : গর্ভাবস্থায় নাক এবং মুখের রক্তনালীতে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় এগুলো অধিক সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। সেজন্য অনেক সময় এসব অঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে পারে কিংবা দাঁত ব্রাশ করার সময় রক্তপাত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাতে শোবার সময় নাকে নরমাল স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে এবং দাঁত ব্রাশ করার সময় নরম ব্রিসলের ব্রাশ দিয়ে সাবধানে ব্রাশ করতে হবে। ৪. চামড়া ঝুলে পড়া : গর্ভধারণের ৪ থেকে ৬ মাস সময়ের মধ্যে বগল, কুচকি এবং অন্যান্য দেহসন্ধিতে চামড়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে ফলে সন্ধিস্থলগুলোতে কুচকানো চামড়া ঝুলে থাকতে দেখা যায়। পেটের আশেপাশে ফাটল ও দেখা যায় । শরীরে হরমোনের পরিবর্তন এবং দ্রুত ওজন বৃদ্ধির কারণেই এমনটি হয়ে থাকে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রসবের পরে ধীরে ধীরে এসব উপসর্গ ঠিক হয়ে যায়। তবে পেটের আশেপাশে যে দাগ পড়ে যায় সেগুলো অনেকসময় ঠিক নাও হতে পারে বলে জানান নিউইয়র্কের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. ডরিস  ডে। চামড়া কোচকান এবং ফাটলজনিত উপসর্গগুলো রুটিন চেকআপের সময় ডাক্তার কে দেখিয়ে নেওয়াই ভাল। গর্ভাবস্থায় সাধারণ ঘটনা কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রে হলেও এটি ত্বক ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। ৫. নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দ নিজ কানে অনুভব করা : শরীরে রক্তের প্রবাহ মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হৃদযন্ত্রকে দ্রুততার সাথে অতিরিক্ত রক্ত পাম্প করতে হয় বলে অনেক সময় নিজের হৃদস্পন্দন নিজ কানেই শুনতে পাওয়া যায় - এতে চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ৬. পায়ের এবং যোনির আশেপাশের রক্তনালী ফুলে ওঠা : জরায়ূতে শিশু ধারণের কারণে এবং রক্তের প্রবাহমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রধান রক্তনালীগুলোতে চাপ পড়ে। ফলে চিকন নালীতে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এতে পেটের নিচের দিকে রক্তপ্রবাহ সম পরিমানে হয় না বলে পায়ের রক্তনালীগুলো স্ফীত হয়ে ওঠে ও পানিপূর্ণ হয়ে যায়। যোনির আশে পাশেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে গর্ভবতী  অস্বস্তি বোধ করেন। এই ধরনের উপসর্গ প্রতিরোধ করতে ডাক্তারের পরামর্শের চেয়ে বেশি দরকারি বাড়তি ওজন কমানো। সংকোচনশীল  টাইটস প্যান্ট পরিধান এক্ষেত্রে কিছুটা আরাম দেবে। প্রসবের পরে এই সমস্যা নিজে থেকেই দূর হয়ে যায়। যোনির আশেপাশে বরফের স্যাক কিছুটা আরাম দিতে পারে। ৭. স্তনের বোঁটার চারপাশ কাল হয়ে যাওয়া : গর্ভবতীদের স্তনের চারপাশে বাদামি অংশ কাল বর্ণ ধারণ করে এবং এই অংশ বিস্তৃতি লাভ করে। প্রাকৃতিকভাবেই সন্তানকে দুগ্ধ পান করানোর জন্যই স্তন বৃন্ত প্রস্তুত হয় বলে এর ব্যাখ্যা দেন ডা. ফকনার।   ৮. অসাড়তা এবং ঝিমঝিম ভাব: গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে কোমরের নিচের হাড়  বা শ্রোণীচক্র প্রসারিত হয় এবং অন্যান্য সন্ধি গুলো ও আলগা হতে থাকে যা সায়াটিকা বা কোমরের নিচের অংশের ব্যথার কারণ হতে পারে ও পায়ে অসাড়তা এবং ঝিমঝিম ভাব দেখা দিতে পারে। গর্ভবতীর জন্য উপযোগী ম্যাসেজ এবং ইওগা দ্বারা এই সমস্যা দূর করা যায়। অতিরিক্ত অসাড়ভাব দেখা দিলে তা সায়াটিক নার্ভ ক ড্যামেজ করে ফেলতে পারে, সেই ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে নতুবা কোমরের নিম্নাংশ সারা জীবনের জন্য অসাড় হয়ে যেতে পারে। ৯. হাতের কব্জিতে ব্যথা অনুভব : পেশীকলা ফুলে ওঠার কারণে কব্জিতে ব্যথা অনুভুত হতে পারে আবার হাতের নার্ভে চাপ পরার কারণেও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এমন উপসর্গ দেখা দেয়, এর ফলে আঙ্গুলে অসাড়তা এবং ঝিমঝিম ভাব থাকতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে কারপাল টানেল সিন্ড্রোম বলা হয়। হাতের জন্য বিশেষ ধরনের ব্রেস বা স্প্লিন্ট ব্যবহারে এই উপসর্গ থেকে আরাম পাওয়া যায়। প্রসবের পরে এই ব্যথা কমে যায়। ১০. ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখা : অনাগত শিশুকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার কারণে ভয়ঙ্কর কোনও স্বপ্ন দেখা (যা বাস্তবের মতো মনে হয় ) বিচিত্র নয়। অবচেতন মনেই অনাগত শিশুকে নিয়ে দুর্ভাবনা মায়ের মনে বাসা বাঁধে যার প্রতিফলন এই দুঃস্বপ্ন। ডা. ক্যাস্পার বলেন এই সকল স্বপ্ন খারাপ কিছুর পূর্বাভাস নয়।  

লাইফস্টাইল


শেয়ার