যে কারণে কপাল পুড়ল সাকিবের





শেয়ার

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলো আইসিসি। ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে সেটাকে প্রত্যাখ্যান করলেও আইসিসি কিংবা বিসিবিকে না জানানোর কারণেই এই শাস্তি আরোপ করা হলো ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটির পক্ষ থেকে। তবে, দোষ স্বীকার করার কারণে, ১ বছরের শাস্তি স্থগিত করেছে আইসিসি। আইসিসির পক্ষ থেকেই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

যে কারণে কপাল পুড়ল সাকিবের

জানা গেছে, গত দুই বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে এক ক্রিকেট জুয়াড়ির (বুকি) কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সেটি তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করলেও আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানিয়ে গোপন করেন তিনি।

বিষয়টি পরে আইসিসি জানতে পারে। আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের কল রেকর্ড ট্র্যাকিং করে এ ব্যাপারে তারা তথ্য উদ্ধার করে। ওই জুয়াড়ি আইসিসির কালো তালিকায় থাকাদের একজন। বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর সম্প্রতি সাকিবের সঙ্গেও কথা বলেন আইসিসির অ্যান্টিকরাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিট (আকসু) প্রতিনিধি।

সাকিবও নিজের ভুল স্বীকার করেছেন আকসু তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, জুয়াড়ির প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেননি বলেই জানাননি। বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়াটাই তার জন্য কাল হয়েছে।

আকসুর ধারা ২.৪.৪ আর্টিকেলের মধ্যেই তিনটি অপরাধ করেছিলেন সাকিব। যেগুলো হচ্ছে-

১. ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়েকে নিয়ে বাংলাদেশের যে ত্রিদেশীয় সিরিজ হয়েছিল কিংবা ২০১৮ আইপিএলে প্রথম ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে কোনো কিছুই জানাননি।

২. একই ধারার অধীনে অপরাধ : ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে ত্রিদেশীয় সিরিজের সময়ই আরো একটি ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু সে বিষয়েও তিনি আইসিসিকে অবহিত করেননি।

৩. ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এবং কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ম্যাচেও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু সে বিষয়েও তিনি আইসিসি কিংবা সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি দমন সংস্থাকে কিছুই জানাননি।

সাকিবের বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ মেনে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এমনকি তার বিরুদ্ধে ঘোষণা করা শাস্তিও মেনে নিয়েছেন তিনি। তবে, যে এক বছরের শাস্তি বাতিল করা হলো, সেটা কার্যকর হবে তখন, যদি তিনি আগামী এক বছর সময়ের মধ্যে আইসিসির কোড অব কন্ডাক্ট মোতাবেক আর কোনো অপরাদের সঙ্গে জড়িত না হন।

প্রসঙ্গত, ভারত সফরের জন্য সাকিবকে অধিনায়ক রেখেই বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা করা হয়েছে কয়েক দিন আগে। তবে দলের অনুশীলনে সাকিবের অনুপস্থিতি দেখে ডালপালা মেলছিল নানা গুঞ্জন। ক্রিকেটারদের ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর গত শুক্রবার থেকে শুরু হয় ভারত সফরের জন্য বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি। কিন্তু অনুশীলনের প্রথম দিনই ছিলেন না অধিনায়ক। তার না থাকা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাচ্ছিলও না বিসিবি। পরে জানা যায়, অসুস্থতার জন্য কোচের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন সাকিব। পরদিন তিনি অনুশীলনে যোগ দেন।

রবি ও সোমবার ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেললেও সাকিব একটিও খেলেননি। তাতে নতুন করে মাথাচাড়া দেয় অনেক প্রশ্ন। বিসিবি এবারও স্পষ্ট করছিল না কোনো কিছু। পরে সোমবার রাতে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান জানান, ভারত সফরের জন্য পরিবর্তিত টি-টোয়েন্টি দল জানানো হবে মঙ্গলবার। তাতে গুঞ্জনগুলো শক্ত ভিত পায় আরও।

মঙ্গলবার দেশের একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বছর আগে জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েও আইসিসি বা বিসিবিকে জানাননি সাকিব।

ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটির দুর্নীতি বিরোধী ধারা অনুযায়ী, কারও কাছ থেকে অনৈতিক কিছুর প্রস্তাব পেলে যত দ্রুত সম্ভব আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হয়। প্রতিটি সিরিজের আগে ক্রিকেটারদের ক্লাস নিয়ে এ নিয়ম মনে করিয়ে দেওয়া হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী, এই ধারা ভঙ্গের শাস্তি হতে পারে ৬ মাস থেকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সাকিবও নিজের ভুল স্বীকার করেছেন আকসু তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, জুয়াড়ির প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেননি বলেই জানাননি। বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়াটাই তার জন্য কাল হয়েছে।

খেলাধুলা


শেয়ার