বিলাতে ক্যাবিনেট ক্যু বরিস জনসন আউট





শেয়ার

ক্যাবিনেট ক্যু! নিজের দলেই বিদ্রোহের শিকার বরিস জনসন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে পদত্যাগ করেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। সেই পথ ধরেন সহযোগীরা। মঙ্গলবার  রাতে এই দৃশ্যের অবতারণা হয়ে তা শেষ হয় গতকাল। এর মধ্যে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগ দাবিতে পদত্যাগ করেন কমপক্ষে ৫০ জন মন্ত্রী ও সহযোগী। ফলে বাধ্য হয়েই কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগের ঘোষণা দেন বরিস জনসন। তবে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদের এমন বিদ্রোহে ক্ষতবিক্ষত তার হৃদয়। তাই, কেউই অপরিহার্য নয়- এই বার্তা দিয়ে পদত্যাগ করেছেন তিনি। তিন বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় থাকার পর গতকাল পদত্যাগের ঘোষণা দেন জনসন।

বিজ্ঞাপন

ডাউনিং স্ট্রিট থেকে এই ঘোষণা দিয়ে গত নির্বাচনে যে লাখ লাখ মানুষ কনজারভেটিভ পার্টিকে ভোট দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। এ খবর দিয়েছে অনলাইন স্কাই নিউজ, বিবিসি। 

 

এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতার জন্য লড়াই করার কারণ ব্যাখ্যা করেন জনসন। বলেন, আমি লড়াই করেছি আমার কাজের জন্য, আমার দায়িত্বের জন্য এবং আপনাদের প্রতি আমার বাধ্যবাধকতার জন্য। তিনি আরও বলেন- তার মন্ত্রিপরিষদকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, এখন প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করা হবে একটি উদ্ভট ব্যাপার। কিন্তু ‘আমার সেই যুক্তিগুলোতে সফল হতে না পারার জন্য অনুশোচনা করছি। এটা সফল না দেখতে পেয়ে বেদনা হচ্ছে’। তিনি আরও বলেন, এখন নতুন নেতা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে টাইম টেবিল ঘোষণা করা হবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়টি এখন পরিষ্কারভাবে পার্লামেন্টারি দলের ওপর। বৃটিশদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে সেরা কাজটি ত্যাগ করতে আমি কতোটা বেদনাহত, তা আপনাদের জানাতে চাই।  তিনি তার ব্যাপক অর্জন সম্পর্কে গর্বিত বলে জানান। এর মধ্যে আছে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করা। বৃটেনকে করোনা মহামারির মধ্যে সামনে এগিয়ে নেয়া। ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের পাশে থেকে নেতৃত্বে থাকা। এ সময় তিনি তার স্ত্রী ক্যারি, তাদের সন্তান, জাতীয় স্বাস্থ্য খাত, সশস্ত্র বাহিনী এবং ডাউনিং স্ট্রিটের স্টাফদের ধন্যবাদ জানান। 

 এর আগে মন্ত্রী এবং সহযোগী মিলে কনজারভেটিভ পার্টির কমপক্ষে ৫০ জনের পদত্যাগের ফলে বরিস জনসনের ওপর পদত্যাগের তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়। নিজের মন্ত্রিপরিষদে এই গণবিদ্রোহ শুরু হয় গত মঙ্গলবার। বিশেষ করে ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে ২০১৯ সালে ক্রিস পিনচারকে নিয়োগ দেয়া নিয়ে তিনি সর্বশেষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। সম্প্রতি একটি প্রাইভেট ক্লাবে গিয়ে সেখানে অতিমাত্রায় মদ পানের কথা স্বীকার করেন ক্রিস পিনচার। ওই সময় তিনি দু’জন পুরুষকে যৌন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এরপরই বিতর্ক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে বলা হয়, তিনি চিফ হুইপ নিয়োগ দেয়ার আগে পিনচারের এসব আচরণ সম্পর্কে জানতেন না। কিন্তু মঙ্গলবার ডাউনিং স্ট্রিট থেকে স্বীকার করা হয়, প্রধানমন্ত্রী জনসন বিষয়টি জানতেন। তা সত্ত্বেও তাকে ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ দেন। এর ফলে বরিস জনসনের বিরুদ্ধে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন অনেক মন্ত্রী ও দলীয় সদস্য। 

শুরু হয় পদত্যাগ। প্রথমেই মঙ্গলবার রাতে পদত্যাগ করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ও চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এমপিদের পদত্যাগপত্রের স্তূপ হতে থাকে। তাতে বরিস জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। একে বৃটিশ মিডিয়াগুলো একরকম ক্যাবিনেট ক্যু হিসেবে দেখছে। একটি পত্রিকা তো প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম করেছে ‘ক্যাবিনেট ক্যু’।  এ অবস্থায় ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্রাডির সঙ্গে বৈঠকের পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত  নেন জনসন। তার কার্যালয়ের এক সূত্রের বরাত দিয়ে স্কাই নিউজ জানিয়েছে, ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্রাডির সঙ্গে বৈঠকে তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে সম্মত হন। ওদিকে বিবিসি জানিয়েছে, কনজারভেটিভ দলের প্রধান হিসেবেও পদত্যাগ করবেন জনসন। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন। আগামী অক্টোবর মাসে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হবে। 

তার পদত্যাগের খবর শুনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টর্মার। তিনি একে সুসংবাদ বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, জনসন সবসময়ই বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অযোগ্য ছিলেন। তিনি মিথ্যা বলেছেন, স্ক্যান্ডাল ঘটিয়েছেন এবং প্রতারণা করেছেন। যারা তাকে সাহায্য করেছেন তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। স্টর্মার আরও বলেন, তারা ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে যে ক্ষতি করেছেন তা অনেক গভীর। ১২ বছর ধরে অর্থনীতি থমকে আছে। ১২ বছর ধরে সরকারি সেবা কমছে। ১২ বছর ধরে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি চলছে। কিন্তু যথেষ্ট হয়েছে। কনজারভেটিভ দলের মধ্যে পরিবর্তন দিয়ে কিছু হবে না। আমাদের প্রয়োজন সরকার পরিবর্তন। বৃটেনকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।

 

আন্তর্জাতিক


শেয়ার

আরও পড়ুন