দেশের সঙ্গে গুরুতর প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে দুই টেবিল টেনিস তারকা সোনাম সুলতানা সোমা ও সাদিয়া রহমান মৌয়ের বিরুদ্ধে। ঘটনা গত ৫ই আগস্টের। ওইদিন বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে নারী দ্বৈতে ইংল্যান্ডের মারিয়া সাপসিনস ও হো টিন টিন জুটির সঙ্গে খেলা ছিল বাংলাদেশের সাদিয়া রহমান মৌ ও সোনাম সুলতানা সোমার। কিন্তু সোমার ইনজুরির কারণে ইংল্যান্ডকে ওয়াকওভার দেয় বাংলাদেশ। ফেডারেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওইদিন সোমার কোনো ইনজুরি ছিল না। তিনি ইনজুরির অভিনয় করেছেন। ম্যাচে অংশ না নিয়ে সেদিন দু’জন লন্ডনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কাউকে না জানিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কারণে দুই খেলোয়াড়কে আন্তর্জাতিক আসরে তিন ও ঘরোয়া আসরে দুই বছর নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেবিল টেনিস ফেডারেশন। গত শনিবার ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নেয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সেদিন তারা না খেলে গেমস ভিলেজের বাইরে ছিল।
এ কারণে ম্যাচটি ওয়াকওভার হয়। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সম্মানহানি হয়েছে। এজন্য কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে ওই দুই খেলোয়াড়কে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া পর্যায়ে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ ফেডারেশন আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করার আগে দুই খেলোয়াড়কে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবে। এজন্য ফেডারেশন তাদের শোকজ নোটিশ পাঠাবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হবে দু’জনকে। দুই খেলোয়াড়ের কাছ থেকে জবাব পাওয়ার পরই ফেডারেশন আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেবে। বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের নারী এককে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন সোমা ও মৌ। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার ম্যাচে মৌ হেরে গেলেও খেলতেই নামেননি সোমা। ইনজুরি কারণে কানাডার ক্যাথরিন মৌরিনকে ওয়াকওভার দেন দেশের নাম্বার ওয়ান এই টিটি তারকা। তখন সোমা জানিয়েছিলেন প্রথম ম্যাচে খেলার আগেই তার অনেক ব্যাকপেইন হচ্ছিল। পরে গেমসের ডাক্তারদের সহযোগিতায় ম্যাচটি খেলেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে তার পক্ষে খেলা সম্ভব নয়। গেমসের ডাক্তারও তখন সোমাকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্রামের পরামর্শ দেন। এই ইনজুরির কারণেই নারী দ্বৈতে খেলতে নামেননি তিনি। যদিও ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দাবি করছেন সোমা ইনজুরিতে ছিল না, লন্ডন যাওয়ার জন্য ইনজুরির অভিনয় করেছেন। জাহাঙ্গীর আলম উল্টো জানতে চান, ‘ওর ব্যাকপেইন থাকলে কীভাবে দুপুর ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গেমস ভিলেজের বাইরে থাকে? সে কীভাবে তিন ঘণ্টা বাস জার্নি করে লন্ডন যায়?’ সোমা-মৌ যখন গেমস ভিলেজ থেকে লন্ডন গিয়েছেন, তখন বার্মিংহামের গেমস ভিলেজেই ছিলেন ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক। কেন জানার পরেও সোমা ও মৌকে গেমস ভিলেজের বাইরে যেতে বাধা দেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি ওদের বলেছি যেহেতু ওয়াকওভার দিয়েছি তোমরা ভিলেজেই থাকো। তারা আমার কথা শোনেনি।’ তখন তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে ফেডারেশন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কমনওয়েলথ গেমসের পর ইসলামিক সলিডারিটি গেমস ছিল। তাই তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিইনি আমরা।’ যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সোনাম সুলতানা সোমা। তিনি বলেন, ‘আমরা গেমস ভিলেজেই ছিলাম। অন্য কোথাও বেড়াতে যাইনি। ভিলেজে থাকার সব প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তারপরও কেন ফেডারেশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জানি না। তাছাড়া এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনো চিঠিও পাইনি। তবে চিঠি পেলে সেটার জবাবও দিতে প্রস্তুত আছি।’